ঢাকা,সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪

আলীকদম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের তহবিল নিয়ে অনিয়ম

আলীকদম (বান্দরবান) প্রতিনিধি ::  বান্দরবান পার্বত্য জেলার আলীকদম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের আয়-ব্যয়ের হিসাবে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিংবডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালা, ২০০৯ এর ৪৫ বিধি লঙ্ঘন করে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কর্তৃক খেয়ালখুশি মত তহবিল ব্যবহারের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। আদালতে ম্যানেজিং কমিটি সংক্রান্ত একটি মামলা বিচারাধীন থাকায় ২০১৪ সাল থেকে এ বিদ্যালয়টি অভিভাবকশূন্য হয়ে পড়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, চলতি ২০১৯ শিক্ষাবর্ষের মার্চ পর্যন্ত প্রাপ্ত হিসেবে ছাত্রী ভর্তি খাতে ৭ লক্ষাধিক টাকা, জেএসসি প্রশংসা পত্রে ১৭ হাজার টাকা ও ২০১৯ সালের জেএসসি রেজিস্ট্রেশনে ১৯ হাজার টাকা আয় হয়। অভিযোগ উঠেছে, এসব আয়ের অধিকাংশই বিনা রশিদে জমা নেওয়া হয় এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসাবে জমা করা হয়নি।

সোনালী ব্যাংক লি:, আলীকদম শাখায় এ বিদ্যালয়ের নামে সঞ্চয়ী হিসাব নং- ১১০১৫৩৪০০৫২৫১ এ ১২ মার্চের স্টেটম্যান্ট রিপোর্টে দেখা যায়, ১৫ অক্টোবর ২০১৮ থেকে ১০ জানুয়ারী ২০১৯ পর্যন্ত ২ লক্ষ ২৭ হাজার ২২১ টাকা জমা রয়েছে। তাতে সর্বশেষ টাকা জমা হয়েছে ২০১৯ সালের ১০ জানুয়ারী সর্বমোট ১ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা। ২০১৮ সালের ১৫ অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ২ জানুয়ারী পর্যন্ত ৩ দফায় এই ব্যাংক হিসাব থেকে তোলা হয়েছে ৬৫ হাজার টাকা।

অপর একটি সঞ্চয়ী হিসাব নং- ১০১৫৩৪০০৩৩০৫ এ গত ১২ মার্চের স্টেটম্যান্টে দেখা যায়, ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ১২ মার্চ পর্যন্ত জমা হয়েছে ৪ লক্ষ ৬১ হাজার ৮৪ টাকা। গত ২৪ জানুয়ারি ও ২৮ ফেব্রুয়ারি উক্ত হিসাব থেকে তোলা হয়েছে ৭৭ হাজার টাকা।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক জানান, ২০১৮ শিক্ষাবর্ষে ৫৩০ জন ছাত্রী ভর্তিখাতে ৫ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা আয় হয়। কিন্তু সে বছরের মার্চে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসাবে মাত্র ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা জমা দেখানো হয়েছে। এছাড়াও রেজিস্ট্রেশন, ফরম ফিলাপ, পরীক্ষার ফি, প্রশংসাপত্র বিক্রি ও পার্বত্য জেলা পরিষদের অনুদানসহ প্রভৃতি খাতে অন্তত আরো ৫ লক্ষাধিক টাকা আয় হয়। এসব আয়ের অধিকাংশই বিনা রশিদে তোলা হয় এবং ব্যাংক হিসাবে জমা হয়নি।

এদিকে, অষ্টম শ্রেণির ৬৬ জন ছাত্রীর স্বাক্ষরিত এক অভিযোগে জানা যায়, বিদ্যালয়টির একজন খ-খালীন শিক্ষিকার মাধ্যমে ২০০ টাকা হারে বিনা রশিদে রেজিস্ট্রেশন ফি নেওয়া হয়। পরবর্তীতে টাকা গ্রহণের রশিদ চাইলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ছাত্রীদের গালিগালাজ ও হুমকী দেয়। ২০১৯ সালের ৩১ জন এসএসসি পরীক্ষার্থীর স্বাক্ষরিত অপর এক অভিযোগে প্রকাশ, শিক্ষার্থীদের নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য দেখিয়ে জনপ্রতি ২০০ টাকা হারে নিয়ে কয়েকটি বিষয়ে পুনঃপরীক্ষা নেওয়া হয়। কিন্তু টাকা গ্রহণ করার রশিদ দেওয়া হয়নি।

এ বিদ্যালয় থেকে ২০১৯ শিক্ষাবর্ষে ৭৬ জন ছাত্রী থেকে ফরম ফিলাপ ও কেন্দ্র ফি বাবদ ২ হাজার টাকা হারে বিনা রশিদে অর্থ আদায় করেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হামিদুল হক। গত ৩১ জানুয়ারী ছাত্রীরা লিখিত অভিযোগ করেন এসব অর্থ নেওয়ার সময় তাদেরকে রশিদ দেয়নি।

সরেজিমন অনুসন্ধানে জানা গেছে, চলতি শিক্ষাবর্ষে এ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত ৪৮০ জন ছাত্রী ভর্তি হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দেওয়া তথ্যমতে প্রতিজন ছাত্রীর ভর্তি ফি ১ হাজার ৫০০ টাকা। সে মতে ৪৮০ জন ছাত্রীর ভর্তিতে ৭ লক্ষ ২০ হাজার টাকা আয় হয়েছে। কিন্তু দুইটি ব্যাংক হিসেবে ৭ জানুয়ারি থেকে ১২ মার্চ পর্যন্ত জমা করা হয়েছে ৪ লক্ষ ৮৫ হাজার ৫০০ টাকা। ছাত্রী ভর্তির আরো ২ লক্ষ ৩৪ হাজার ৫০০ টাকার হদিস নেই।

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিংবডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালা, ২০০৯ মতে ‘বিদ্যালয়ের সকল দায় ক্রস্ড চেকের মাধ্যমে পরিশোধযোগ্য। কোনক্রেমেই নগদ আদায়কৃত অর্থ ব্যাংকে জমা না করে নগদে (ক্যাশ টু ক্যাশ) ব্যয় করা যাবে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহের জন্য কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে অনধিক ১০ হাজার টাকা উত্তোলন করে হাতে রাখা যাবে।’ কিন্তু প্রবিধানের এসব শর্ত হরহামেশাই লঙ্ঘন করা হচ্ছে এ বিদ্যালয়ে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হামিদুল হক জানান, ‘আমি ব্যাংক হিসাব সংক্রান্ত তথ্য কাউকে জানাতে বাধ্য নই। কমিটির সভাপতিই একমাত্র তা জানতে পারেন। তিনি বলেন, আমার পূর্বের প্রধান শিক্ষক অবসর গ্রহণের সময় তহবিল শুন্য করে গেছেন। পূর্বের কোন হিসাব নিকাশ আমি জানি না।’ তিনি ছাত্রীদের কাছ থেকে বিনা রশিদে অর্থ গ্রহণের বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ‘ইউএনও চাইলে আমি ব্যাংক স্টেটম্যান্ট দিতে পারবো।’

পাঠকের মতামত: